বিশ্বব্যাপী অনলাইন ব্যবহারকারীদের জন্য নতুন এক আতঙ্কের খবর। ইতিহাসের সবচেয়ে বড় পাসওয়ার্ড ফাঁসের ঘটনা সামনে এসেছে। আন্তর্জাতিক সাইবার নিরাপত্তা গবেষণা সংস্থা Cybernews জানিয়েছে, বিশ্বের বিভিন্ন তথ্যভাণ্ডার থেকে অন্তত ১৬ বিলিয়ন লগইন তথ্য হ্যাকারদের হাতে চলে গেছে। এই বিপুল পরিমাণ তথ্যের মধ্যে রয়েছে অ্যাপল, ফেসবুক, গুগল, ইনস্টাগ্রাম, টেলিগ্রাম, গিটহাব সহ জনপ্রিয় অনলাইন সেবার অ্যাকাউন্টের ইউজারনেম ও পাসওয়ার্ড।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই তথ্য শুধু ফাঁস নয়, বরং বিশ্বব্যাপী সাইবার অপরাধের জন্য একটি নকশা। এর মধ্য দিয়ে সাইবার অপরাধীরা যেকোনো সময় মানুষের অনলাইন অ্যাকাউন্ট দখল, পরিচয় চুরি, ফিশিং মেসেজ পাঠানো এমনকি ব্যাংক অ্যাকাউন্টও দখল করতে পারবে। এসব তথ্যের বেশিরভাগই একেবারে নতুন এবং সরাসরি অপরাধমূলক কাজে ব্যবহারের উপযোগী।
গবেষণা সংস্থা জানিয়েছে, এই ঘটনা কোনও একক হ্যাকার ঘটায়নি। বরং বিভিন্ন infostealer ম্যালওয়্যার ও ডেটা চোরাকারবারি গ্রুপের মাধ্যমে বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে এই ডেটাগুলো সংগ্রহ করে একত্রিত করা হয়েছে। আর এর ফাঁস হওয়া সময়টাও খুব সাম্প্রতিক। ২০২৫ সালের শুরু থেকেই Cybernews এসব তথ্য নজরে রেখেছিল।
বিশ্বের বহু মানুষ অভ্যাসগতভাবে একই পাসওয়ার্ড বিভিন্ন সাইটে ব্যবহার করে থাকেন। ফলে একবার কোনো এক জায়গার তথ্য ফাঁস হলে অন্যান্য অ্যাকাউন্টও সহজেই হ্যাকের শিকার হতে পারে। সাইবার অপরাধীরা এক্ষেত্রে credential stuffing নামের কৌশল ব্যবহার করে এক সাইটের তথ্য দিয়ে অন্য অ্যাকাউন্টে ঢোকার চেষ্টা করে।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, এই ফাঁস হওয়া ডেটার ভেতরে শুধু ইউজারনেম-পাসওয়ার্ড নয়, সেশন টোকেন, লগইন লগ ও আইপি ঠিকানা-ও আছে। যার মাধ্যমে খুব সহজেই কারও অ্যাকাউন্ট কিছু সময়ের জন্য হ্যাকারদের দখলে চলে যেতে পারে।
Cybernews আরও জানিয়েছে, হ্যাকাররা এই তথ্য দিয়ে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট হ্যাক, পরিচয় চুরি, অনলাইন কেনাকাটার সময় তথ্য চুরি, মোবাইল ফিশিং মেসেজ পাঠানো, ইমেইল হ্যাক এমনকি পরিচিতজনদের কাছে ভয়ংকর লিঙ্ক পাঠানোর মতো অপরাধ করতে পারে।
এই ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে বাঁচতে অবিলম্বে প্রতিটি অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। সেই সঙ্গে প্রতিটি সাইটের জন্য আলাদা আলাদা এবং অন্তত ১৫ অক্ষরের শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এতে বড় হাতের অক্ষর, ছোট হাতের অক্ষর, সংখ্যা ও স্পেশাল ক্যারেক্টার রাখতে হবে।
এছাড়া দ্বি-স্তর নিরাপত্তা (Two Factor Authentication) চালু করতে বলা হয়েছে। সম্ভব হলে পাসওয়ার্ড ম্যানেজার বা নতুন passkey সিস্টেম ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে।
ইতিমধ্যে FBI এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সাইবার নিরাপত্তা সংস্থা সতর্কতা জারি করেছে। তারা বলছে, এই ধরনের তথ্য ফাঁসের ঘটনা শুধু ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্যই নয়, বরং রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার জন্যও হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে।
বিশ্বের ইতিহাসের এই সবচেয়ে বড় সাইবার তথ্য ফাঁসের ঘটনায় প্রায় সব অনলাইন সেবা-প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানকে সতর্কতা জারি করতে দেখা গেছে। এমনকি অনেক প্রতিষ্ঠান নিজে থেকেই ইউজারদের ইমেইল করে পাসওয়ার্ড পরিবর্তনের আহ্বান জানাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনই সচেতন না হলে যেকোনো সময় ভয়াবহ সাইবার অপরাধের শিকার হতে পারেন যে কেউ। তাই এই মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি কাজ — পাসওয়ার্ড বদলানো, Two Factor Authentication চালু করা এবং সন্দেহজনক কোনো লিঙ্ক বা ইমেইলে ক্লিক করা থেকে বিরত থাকা।
সাইবার অপরাধের এমন ভয়াবহতায় সচেতন থাকতে হবে সকলকে।