১৯৮০-৮৮ সালের ইরান-ইরাক যুদ্ধকালে উভয় পক্ষ উপসাগরে বাণিজ্যিক জাহাজ আক্রমণ করলেও হরমুজ প্রণালী কখনো পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। তবে তখনকার “ট্যাঙ্কার যুদ্ধ” প্রণালীর সামরিক গুরুত্ব ও ঝুঁকির মাত্রা স্পষ্ট করেছিল।
সাম্প্রতিক সময়ে, ২০১৯ সালে ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে, ফুজাইরাহ উপকূলে হরমুজের কাছাকাছি ৪টি জাহাজে হামলার ঘটনা ঘটে। যুক্তরাষ্ট্র এই হামলার জন্য ইরানকে দায়ী করলেও, ইরান অভিযোগ অস্বীকার করে।
হরমুজ প্রণালী বন্ধ হলে এর প্রভাব কেবল মধ্যপ্রাচ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। এমনকি যারা পারস্য উপসাগর থেকে সরাসরি তেল আমদানি করে না, তাদেরও ব্যয় বাড়বে—কারণ বিশ্ববাজারে তেলের ঘাটতি মানেই মূল্যবৃদ্ধি।
বিশ্ববাজারে ইতোমধ্যে যুদ্ধের প্রভাব পড়েছে; গত শুক্রবার তেলের দাম প্রতি ব্যারেল $৭৮ ছুঁয়েছে, যা কিছুটা কমে আসলেও বিশ্লেষকরা সতর্ক করে বলছেন, প্রণালী বন্ধ হলে দাম $১০০-এর ওপরে উঠে যেতে পারে।
বাব আল-মানদেব প্রণালী ঘিরে ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীরা যেমন জাহাজ আক্রমণ চালিয়ে বাণিজ্য ঝুঁকির সৃষ্টি করেছে, সেক্ষেত্রে জাহাজগুলো আফ্রিকা ঘুরে বিকল্প পথে যাত্রা করতে পারে। কিন্তু হরমুজের কোনো বিকল্প সমুদ্রপথ নেই—তাই একে ঘিরে যুদ্ধ বা অবরোধের সম্ভাবনা অনেক বেশি জটিল ও বিপজ্জনক।
ইরান এখনো সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেনি। তবে হরমুজ বন্ধের মতো পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক প্রতিক্রিয়া উস্কে দিতে পারে, যা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মতো আগ্রাসী নেতৃত্বের অধীনে ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।
হরমুজ বন্ধের হুমকি ইরান এর আগেও দিয়েছে। ২০২৪ সালের এপ্রিলে, ইসরায়েল সিরিয়ার দামেস্কে ইরানি কনস্যুলেটে হামলা চালানোর পর উত্তেজনার মধ্যে ইরান একটি কনটেইনার জাহাজ জব্দ করে, যা হরমুজের কাছেই অবস্থান করছিল।
তবে এমন আক্রমণ সত্ত্বেও, ইরান যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটিতে হামলা চালায়নি, এবং ওয়াশিংটনও সরাসরি ইরানে হামলা করেনি। কিন্তু ইসমাইল কোসারির সাম্প্রতিক মন্তব্য ইঙ্গিত দেয়—জাহাজ চলাচলে আঘাত হানার বিকল্প কৌশল হিসেবে হরমুজ প্রণালী ইরানের হাতে থাকা একটি বাস্তব চাপ প্রয়োগের হাতিয়ার, যা তারা প্রয়োজনে ব্যবহার করতে পারে।