জামায়াত মনে করছে, জাতীয় নির্বাচনের প্রাক্কালে এই সমাবেশ হবে তাদের জন্য একটি কৌশলগত ‘শক্তি প্রদর্শন’। সমাবেশ সফল করতে দলের আমিরসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের তত্ত্বাবধানে মিয়া গোলাম পরওয়ারকে আহ্বায়ক করে জাতীয় সমাবেশ বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করা হয়েছে। এর অধীনে রাজধানী ও বিভাগীয় শহরগুলোতে চলেছে প্রচার-সংগঠনের তৎপরতা।
জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের জানান, “স্বাধীনতার পর এই প্রথমবার জামায়াতে ইসলামী সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় সমাবেশ করতে যাচ্ছে। এটি দলের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ একটি অধ্যায় হতে যাচ্ছে।”
তিনি বলেন, “এই সমাবেশের মাধ্যমে আমরা সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের দাবি তুলবো। তার আগে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ তৈরির প্রয়োজনীয়তা, সংখ্যানুপাতিক (PR) পদ্ধতিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনের প্রক্রিয়া কার্যকর করার আহ্বান জানাবো।”
দলটির সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার সম্প্রতি ঢাকায় এক সভায় বলেন, “শহীদের রক্তস্নাত বাংলায় ইসলামি পতাকা উত্তোলন এবং ঐক্য প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষা সামনে রেখেই ১৯ জুলাইয়ের সমাবেশ। এই কর্মসূচিকে রাজনৈতিক টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে ধরে এগোচ্ছি আমরা।”
তিনি আরও বলেন, “এই সমাবেশ আমাদের অস্তিত্বের, ঐক্যের ও নতুন যাত্রার বার্তা দেবে। এটি সফল করতে প্রত্যেক কর্মীকে এগিয়ে আসতে হবে।”
গত বছরের আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাজধানীতে বিএনপি, ইসলামী আন্দোলন, হেফাজতে ইসলামসহ বিভিন্ন দল বড় সমাবেশ করে। জামায়াত তখন কেবল পুরানা পল্টনে কারাবন্দী নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলামের মুক্তির দাবিতে একবার সমাবেশ করেছিল। ফলে এবারের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজনটি দলের জন্য ভিন্নমাত্রার বলে মনে করছে তারা।
জামায়াতে ইসলামী ১৯৪১ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও বাংলাদেশে দলটি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতার কারণে নিষিদ্ধ হয়।
তৎকালীন সরকার জামায়াতের রাজনৈতিক কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। এরপর ১৯৭৫ সালে শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডের পর দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সুযোগে ১৯৭৭ সালে রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান জামায়াতের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেন।
এরপর ১৯৭৯ সালে আব্বাস আলী খানের নেতৃত্বে দলটি আবার রাজনৈতিক কার্যক্রম শুরু করে। ১৯৮০ সালে বায়তুল মোকাররম মসজিদের সামনে জামায়াতের প্রথম প্রকাশ্য জনসভা হয়—যেটি ছিল স্বাধীন বাংলাদেশে তাদের প্রথম বড় রাজনৈতিক জমায়েত।
এরপর থেকে দলটি অনেকবার পুরানা পল্টন, বায়তুল মোকাররম ও আশপাশের এলাকায় সভা করলেও, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কখনো দলীয়ভাবে একক সমাবেশ করেনি।
নেতারা বলছেন, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ইসলামি মূল্যবোধ ও জাতীয় স্বার্থে জনসম্পৃক্ততা বাড়ানোর লক্ষ্যে জামায়াত জনগণের সঙ্গে সরাসরি সংযোগে যেতে চায়।
এই সমাবেশকে তারা আগামী নির্বাচনের আগে জনগণের কাছে নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা ও সংগঠনের শক্তি প্রদর্শনের বিরল সুযোগ হিসেবে দেখছে।