যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক বিমান হামলায় ইরানের পরমাণু কর্মসূচি “এক থেকে দুই বছর” পিছিয়ে গেছে বলে দাবি করেছে পেন্টাগন। পেন্টাগনের মুখপাত্র শন পার্নেল বুধবার সাংবাদিকদের বলেছেন, “আমরা তাদের কর্মসূচিকে এক থেকে দুই বছর পিছিয়ে দিয়েছি। অন্তত, গোয়েন্দা বিভাগের মূল্যায়ন তাই বলছে। আমরা দুই বছরের কাছাকাছি মনে করছি।” তিনি আরও দাবি করেন, ইরানের ফোরদো, নাতানজ এবং ইসফাহান এই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পরমাণু স্থাপনা “সম্পূর্ণ ধ্বংস” হয়ে গেছে। পার্নেলের মতে, “আমরা বিশ্বাস করি যে ইরানের পারমাণবিক ক্ষমতা মারাত্মকভাবে হ্রাস পেয়েছে, সম্ভবত বোমা তৈরির উচ্চাকাঙ্ক্ষাও।”
. @SeanParnellATSD "What we've seen universally among our allies was them CONGRATULATING the United States, @POTUS and @SecDef on that BOLD OPERATION, and that idea that American action on Iran has set the conditions for global stability." pic.twitter.com/cGh0CC31N4
— DOD Rapid Response (@DODResponse) July 2, 2025
পেন্টাগনের তথ্য অনুযায়ী, গত ২২ জুন যুক্তরাষ্ট্র ফোরদো পরমাণু কেন্দ্রে ছয়টি বাঙ্কার-বাস্টার বোমা নিক্ষেপ করেছে এবং নাতানজ ও ইসফাহানের অন্য দুটি স্থাপনায় সাবমেরিন থেকে ডজনখানেক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। এই হামলাগুলো ইরানের পরমাণু কর্মসূচির বিরুদ্ধে একটি বৃহত্তর অভিযানের অংশ ছিল।
তবে, এই মার্কিন হামলার কার্যকারিতা নিয়ে বিতর্ক রয়েই গেছে। প্রাথমিকভাবে ইরান দাবি করেছিল যে, ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা “সামান্য” ছিল এবং আক্রমণ শুরুর আগেই সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম লক্ষ্যবস্তু থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল, যা ইঙ্গিত দেয় যে ইরান সম্ভবত হামলার পূর্বাভাস পেয়েছিল। যদিও ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি সিবিএস নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে স্বীকার করেছেন যে, ফোরদো পরমাণু কেন্দ্রে মার্কিন বোমা হামলায় “মারাত্মক ও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি” হয়েছে, কিন্তু তিনি একই সঙ্গে বলেছেন, “ফোরদোর ভেতরে ঠিক কী ঘটেছে, তা কেউ জানে না।” তার এই মন্তব্য প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে এক ধরনের ধোঁয়াশা তৈরি করে।
মার্কিন সামরিক হামলার কৌশলগত উদ্দেশ্য ছিল ইরানের পরমাণু কর্মসূচিকে থামিয়ে দেওয়া বা বিলম্বিত করা। তবে, এই প্রচেষ্টা দীর্ঘমেয়াদে কতটা সফল হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে ইরানের সাম্প্রতিক এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপের কারণে। তেহরান সম্প্রতি জাতিসংঘের পরমাণু পর্যবেক্ষক সংস্থা (আইএইএ)-এর সঙ্গে সহযোগিতা স্থগিত করার ঘোষণা দিয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর “অগ্রহণযোগ্য” বলে নিন্দা করেছে।
ইরানের এই সিদ্ধান্তটি আসে ১২ দিনের সংঘাত এবং পরমাণু স্থাপনাগুলোতে হামলার প্রতিক্রিয়ায় পার্লামেন্টে পাস হওয়া ও গার্ডিয়ান কাউন্সিল কর্তৃক অনুমোদিত একটি আইনের পরিপ্রেক্ষিতে। আইএইএ-এর সঙ্গে সহযোগিতা বন্ধ করার অর্থ হলো আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা এখন ইরানের পরমাণু কার্যক্রমের ওপর সরাসরি নজর রাখতে পারবেন না। এর ফলে, যুক্তরাষ্ট্র হামলা চালিয়ে যে ক্ষয়ক্ষতি করেছে, তার প্রকৃত অবস্থা যাচাই করা কঠিন হয়ে পড়বে। যদি আইএইএ নজরদারি না করতে পারে, তবে ইরান গোপনে তাদের কর্মসূচি পুনরায় শুরু করতে বা চালিয়ে যেতে পারে, যা যুক্তরাষ্ট্রের হামলার দীর্ঘমেয়াদী প্রভাবকে কার্যত ব্যর্থ করে দিতে পারে। ওয়াশিংটন হামলা চালিয়ে ইরানের পরমাণু সক্ষমতা হ্রাস করতে চাইলেও, তেহরানের এই পাল্টা পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক নজরদারি ছাড়াই তাদের কাজ চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দিতে পারে, যা যুক্তরাষ্ট্রের প্রচেষ্টাগুলোকে অসম্পূর্ণ বা ব্যর্থ করে দেওয়ার ঝুঁকি তৈরি করছে।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র এখনও মধ্যপ্রাচ্যে তাদের সামরিক সক্ষমতা বজায় রাখার ঘোষণা দিয়েছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং প্রতিরক্ষা সচিব পিট হেগসেথ মার্কিন নাগরিক, সেনা ও আঞ্চলিক সম্পদ রক্ষায় “বিভিন্ন সামরিক বিকল্প” ব্যবহারের ক্ষমতা রাখেন বলে পেন্টাগন মুখপাত্র পার্নেল জানিয়েছেন।
সূত্র: টিআরটি ওয়ার্ল্ড