ইরান-ইসরায়েল সংঘর্ষে সোমবার (১৭ জুন) এক নতুন বাঁক দেখা দিল। ইসরায়েলি বিমান হামলায় ইরানের শীর্ষ সেনা কর্মকর্তা জেনারেল আলি শাদমানি নিহত হন, তেহরান ও কাশান শহরে প্রাণ হারান আরও অন্তত ৪ জন বেসামরিক নাগরিক। এই নিয়ে ইসরায়েল অন্তত ৮ জন উচ্চপর্যায়ের সামরিক নেতাকে সরাসরি নিশানা করল।
এদিকে, আন্তর্জাতিক পারমাণবিক সংস্থা IAEA নিশ্চিত করেছে যে ইসরায়েলি আঘাতে নাতানজ পারমাণবিক স্থাপনায় আন্ডারগ্রাউন্ড ইউরেনিয়াম এনরিচমেন্ট হলে সরাসরি ক্ষতির ইঙ্গিত পাওয়া গেছে —এই ঘোষণা সংঘাতকে বৈশ্বিক নিরাপত্তার দৃষ্টিকোণ থেকে আরও উদ্বেগজনক করে তুলেছে। তবে ইসফাহান ও ফোর্ডো পারমাণবিক গবেষণাগারে এ ধরণের ক্ষতির কোনো প্রমাণ তারা পায়নি।
ইসরায়েলের দাবি অনুযায়ী, সোমবার দিনভর তারা ১২টি ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ ও সংরক্ষণ কেন্দ্রে আঘাত হেনেছে । তেহরান ছাড়াও ইসফাহান ও তাবরিজ ছিল হামলার আওতায়। ইরানি রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা IRNA জানিয়েছে, রাজধানী তেহরানে হামলা ছিল “অবিরাম ও তীব্র”।
ইরানের পক্ষ থেকেও জবাব এসেছে। উত্তর ইসরায়েল ও তেল আবিবে চালানো ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইরান দাবি করছে, একটি মিলিটারি ইন্টেলিজেন্স সেন্টার ও একটি মোসাদ পরিচালন কেন্দ্র আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। পাশাপাশি তারা জানিয়েছে, ইসরায়েলি আক্রমণ যেসব বিমানঘাঁটি থেকে চালানো হয়েছে, সেগুলোতে পাল্টা হামলা শুরু হয়েছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় ইরান বলছে, তারা ২৮টি শত্রুপক্ষের উড়োজাহাজ শনাক্ত ও প্রতিহত করেছে, যাদের মধ্যে একটি গোপন ড্রোন ছিল, যা ইরানের সংবেদনশীল এলাকায় তথ্য সংগ্রহে পাঠানো হয়েছিল। ইরানের সেনাপ্রধান আব্দুররহিম মুসাভি বলেছেন,
“এই হামলাগুলো প্রতিশোধ নয়, সতর্কবার্তা। প্রকৃত শাস্তিমূলক অভিযান এখনও বাকি।”
তেহরানে একটি রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের ভবনে আঘাতে একাধিক প্রাণহানি ঘটে। কাশানে নিহত হয়েছেন অন্তত তিনজন বেসামরিক ব্যক্তি। পারমাণবিক স্থাপনায় সরাসরি আঘাতের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান টেড্রস গেব্রিয়েসুস আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন,
“এই ধরনের হামলা সিভিলিয়ানদের জন্য গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করতে পারে।”
ইতিমধ্যে ৬০০ জনের বেশি বিদেশি নাগরিক ইরান থেকে আজারবাইজানে পালিয়ে গেছেন। এদের মধ্যে রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, জার্মানি, ইতালি, স্পেন ও রোমানিয়ার নাগরিক। পাশাপাশি চীন, দক্ষিণ কোরিয়া ও ইউক্রেন তাদের নাগরিকদের ইরান ও ইসরায়েল থেকে দ্রুত সরে আসতে বলেছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জি৭ সম্মেলন থেকে আগেভাগে বেরিয়ে বলেন,
“আমরা যুদ্ধবিরতির কথা বলছি না। আমরা চাই স্থায়ী সমাপ্তি—ইরান পুরোপুরি পারমাণবিক কর্মসূচি ছেড়ে দিক।”
তিনি নিজের Truth Social-এ লিখেছেন,
“আমাদের এখন ইরানের আকাশসীমার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।”
সবচেয়ে বিস্ময়কর ও উদ্বেগজনক দিক হলো, ট্রাম্পের ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনিকে হত্যা করার হুমকির ইঙ্গিত, যা পরিস্থিতিকে চরমভাবে উসকে দিয়েছে।
রাশিয়া, কাতার ও জর্ডান একযোগে ইসরায়েলের হামলাকে “বেআইনি ও বিপজ্জনক” বলে নিন্দা জানিয়েছে। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ স্পষ্ট বলেছেন,
“ইরানে শাসন পরিবর্তনের চেষ্টা সহ যেকোনো সামরিক হস্তক্ষেপের আমি বিরোধী।”
হুথি বিদ্রোহী গোষ্ঠী হুঁশিয়ারি দিয়েছে, মুসলিম দেশ হিসেবে ইরানের সমর্থনে তারা সরাসরি হস্তক্ষেপ করবে।
তথ্যসূত্র: AFP, আল জাজিরাহ, IRNA, IAEA