গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকে এক ভয়াবহ পরিসংখ্যান সামনে এসেছে: গাজায় এখনো পর্যন্ত প্রায় ৩৭৭,০০০ মানুষ নিখোঁজ। এই তথ্য উঠে এসেছে গবেষক ইয়াকভ গার্ব-এর বিশ্লেষণ থেকে, যেটি ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর (IDF) ডেটা ব্যবহার করে তৈরি এবং ১০ই জুন Medium-এ প্রকাশিত হয়েছে।
যুদ্ধ শুরুর আগে গাজার জনসংখ্যা ছিল প্রায় ২২.২৭ লাখ। বর্তমান অনুমান অনুযায়ী, সেখানে এখন আছেন মাত্র ১৮.৫ লাখ মানুষ। এই ঘাটতির মানেই হলো, প্রায় ৩.৭ লাখ মানুষ কোথাও নেই—তাদের খোঁজ মিলছে না জীবিতদের মাঝেও, মৃতদের তালিকাতেও না।
এই বিপুল সংখ্যক মানুষের কোনো সুনির্দিষ্ট হিসেব নেই। কেউ ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে গেছেন, কারও মৃত্যুর তথ্য নথিভুক্ত হয়নি, কেউ হয়তো সীমান্ত পেরিয়ে পালিয়ে গেছেন পরিচয় না দিয়ে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও জাতিসংঘের সূত্র মতে, অন্তত ৫১,০০০ মানুষ নিশ্চিতভাবে নিহত হয়েছেন। বিভিন্ন গণকবরে এখনও হাজারো মরদেহ অচিহ্নিত। WHO ও অন্যান্য সংস্থার মতে, ধ্বংসস্তূপের নিচে আরও অন্তত ১০,০০০ জনের বেশি মানুষ চাপা পড়ে থাকতে পারে।
একজন গাজাবাসী মা, যিনি The New York Times-কে জানান, “আমার ছেলেটা সকালে বেরিয়েছিল স্কুলে, তারপর আর ফেরেনি। আমি জানি না সে কোথায়। কেউ জানে না।”
এই মা একা নন—তাঁর মতো হাজার হাজার পরিবার প্রতিদিন অজানা অপেক্ষা নিয়ে বেঁচে আছেন।
মানবাধিকার সংস্থা Euro-Med Human Rights Monitor, এই গণহত্যাকে “demographic erasure” বলে অভিহিত করছে—একটি জাতিকে মুছে ফেলার সুপরিকল্পিত প্রচেষ্টা।
তারা বলছে, “পুরো পরিবার মুছে যাচ্ছে। বাড়ি, রাস্তা, হাসপাতাল, এমনকি রেকর্ডও। যেন এরা কোনোদিন ছিল না।”
গণমাধ্যমে যে পরিমাণ মৃত্যুর সংখ্যা সামনে আসে, তার বাইরেও লুকিয়ে আছে আরও ভয়ঙ্কর বাস্তবতা: একটি জাতির অস্তিত্ব হ্রাস করে ফেলা হচ্ছে—গোপনে, ধাপে ধাপে।
বিশ্ব নেতাদের বেশিরভাগ এখনো কেবল ‘সহানুভূতির বার্তা’ দিচ্ছে। যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব আটকে যাচ্ছে নিরাপত্তা পরিষদের টেবিলে। অথচ গাজায় প্রতিদিন গড়ছে আরও লাশের সারি।
গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোর নীরবতা আর নিষ্ক্রিয়তা এখন প্রশ্নের মুখে। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে এই নিখোঁজ মানুষের দায় কে নেবে? এই প্রশ্ন গাজার ধূলিমলিন শিশুদের চোখে জ্বলছে প্রতিদিন।
গাজার মানুষ এখন ইতিহাসের এক চরম মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যে। এই নিখোঁজ ৩৭৭,০০০ মানুষের অস্তিত্ব কেবল সংখ্যা নয়, এটি একেকটি জীবন, একেকটি পরিবার, একেকটি ইতিহাস।এই নিখোঁজরা যেন কোনোদিন হারিয়ে না যান, যেন তাদের প্রজন্মের কণ্ঠ একদিন ন্যায়ের জবাব পায়—এটাই এখন সময়ের দাবি।
তথ্যসূত্র: Medium – Maximilian, UN OCHA Gaza Humanitarian Reports, Euro-Med Human Rights Monitor, WHO Gaza Situation Updates, Al Jazeera, The New York Times Gaza Reports