দক্ষিণ এশিয়ার বাণিজ্যিক মানচিত্রে বড় পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর। বহুদিনের দাবি শেষে এবার শুরু হচ্ছে এই বন্দরের বাস্তব নির্মাণ কাজ। আজ মঙ্গলবার রাজধানীতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে জাপানের দুই প্রতিষ্ঠানের—পেন্টা ওশান কনস্ট্রাকশন ও টিওএ করপোরেশনের—মধ্যে যৌথ নির্মাণচুক্তি সই হওয়ার কথা রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমানে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বন্দর চট্টগ্রাম মূলত একটি নদীবন্দর। সেখানে দিনে মাত্র দুইবার ৬ ঘণ্টার মতো সময় জোয়ারের সুবিধায় সর্বোচ্চ সাড়ে ৯ মিটার ড্রাফটের জাহাজ চলাচল করতে পারে। কিন্তু মাতারবাড়ি বন্দর হবে প্রকৃত গভীর সমুদ্রবন্দর, যেখানে ১৭ মিটার ড্রাফটের মাদার ভেসেল সরাসরি ভিড়তে পারবে। এর ফলে জাহাজ চলাচলের সময়, খরচ ও জটিলতা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাবে।
শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক খায়রুল ইসলাম সুজন জানান, বর্তমানে আমেরিকা থেকে একটি কন্টেইনার চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছাতে ট্রান্সশিপমেন্টসহ সময় লাগে ৪০-৪২ দিন এবং খরচ পড়ে প্রায় ৩২০০ ডলার। মাতারবাড়ি চালু হলে একই কন্টেইনার আসবে দুই সপ্তাহের মধ্যে এবং খরচ হবে মাত্র ১৩০০ ডলারেরও কম।
মহেশখালীর পরিত্যক্ত চর মাতারবাড়িতে এর আগেই নির্মিত হয়েছে ১২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র। সেখানকার কৃত্রিমভাবে খননকৃত ১৪.৩ কিলোমিটারের ১৭ মিটার গভীর চ্যানেল ও সাগরে তৈরি ব্রেক ওয়াটার নতুন বন্দরের ভিত্তি হিসেবে কাজ করছে। এই চ্যানেল ইতিমধ্যে ১৬১টি জাহাজ গ্রহণ করেছে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এসএম মনিরুজ্জামান জানিয়েছেন, ২০২৪ সালের অক্টোবরে একনেক ২৪ হাজার ৩৮১ কোটি টাকার এই প্রকল্প অনুমোদন দেয়। চুক্তি স্বাক্ষরের পর দ্রুতই অবকাঠামো নির্মাণ শুরু হবে। যেহেতু প্রধান চ্যালেঞ্জ—ব্রেক ওয়াটার ও চ্যানেল খনন—ইতিমধ্যেই সম্পন্ন, তাই প্রকল্প বাস্তবায়নে আর বড় বাধা নেই। আশা করা যাচ্ছে, ২০২৯ সালের মধ্যেই বন্দরটি চালু হবে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মাতারবাড়ি বন্দর শুধু বাংলাদেশের নয়, গোটা দক্ষিণ এশিয়ার আমদানি-রপ্তানি ব্যবস্থাকে আমূল বদলে দেবে। ভারত, নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার এমনকি চীনেরও একটি অংশ এই বন্দরের সুবিধা নিতে পারে। একইসঙ্গে ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা দিয়ে বাংলাদেশ প্রতিবেশী দেশগুলোর কাছ থেকে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের নতুন সুযোগ পাবে। এতে জাতীয় অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর।