ঢাকার মিরপুরের ব্যস্ত অলিগলি থেকে শুরু হয়েছিল এক তরুণের স্বপ্নপূরণের যাত্রা। ছোটবেলা থেকেই প্রযুক্তির প্রতি ছিল গভীর টান। টেক ম্যাগাজিনের পাতা উল্টে পাইলট, কখনো বিজ্ঞানী হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন মোহাম্মদ আসিফুজ্জামান। সেই আগ্রহ আর অদম্য ইচ্ছাই একদিন তাকে নিয়ে গেছে বিশ্বের অন্যতম বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান মাইক্রোসফটে। দেখিয়ে দিয়েছেন, ইচ্ছে থাকলে, কঠোর পরিশ্রম করলে কোনো কিছুই অসম্ভব নয়।
আসিফুজ্জামানের পড়াশোনা শুরু হয়েছিল বিসিআইসি স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে। অষ্টম শ্রেণিতে বৃত্তি পেয়েছিলেন। এরপর এসএসসি পরীক্ষায় পেয়েছেন জিপিএ-৫। তারপর বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ পাবলিক কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। সেই সময় থেকেই তার স্বপ্ন ছিল প্রযুক্তি খাতে কিছু করার। তাই উচ্চশিক্ষার জন্য ভর্তি হন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি)-এর ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে। সেখান থেকে ৩.৫৭ সিজিপিএ নিয়ে স্নাতক শেষ করেন। পড়াশোনার পাশাপাশি প্রযুক্তির নানা বিষয়ে আগ্রহ ছিল তার। Microsoft Learn Student Ambassador হিসেবে যুক্ত ছিলেন। বিভিন্ন ওয়ার্কশপ, প্রোগ্রাম আর কমিউনিটিতে অংশ নিয়ে নিজের দক্ষতা বাড়ানোর চেষ্টা করেছেন।
স্নাতক শেষ করার পর উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে ভর্তি হন ভ্যালেন্সিয়া কলেজে। কঠিন পরিশ্রম আর একাগ্রতায় সেখানেও তিনি পেয়েছেন ৪.০০ স্কোর। পেয়েছেন প্রেসিডেন্ট’স অনার, যা ছিল তার ক্যারিয়ারের আরেক বড় অর্জন। এরপর শুরু করেন পেশাগত জীবন। যুক্তরাষ্ট্রেই মাইক্রোসফটের অফিসে চাকরির সুযোগ পান। প্রথমে কাজ করেন মাইক্রোসফট ৩৬৫-এর টেকনিক্যাল সাপোর্ট ইঞ্জিনিয়ার (SMB) হিসেবে। মাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই নিজের দক্ষতা আর নেতৃত্বগুণের জন্য পদোন্নতি পেয়ে টেকনিক্যাল লিড হন।
২০২৪ সালের শুরুতে যুক্ত হন মাইক্রোসফট ৩৬৫ কপাইলট প্রকল্পের সঙ্গে। এখানে কাজের মূল দায়িত্ব ছিল, মাইক্রোসফট ৩৬৫-এর গ্রাহকদের জন্য এআই-ভিত্তিক কপাইলট সেবা সহজবোধ্য করা এবং তাদের ব্যবহারে সহায়তা করা। গ্রাহকদের সমস্যার ধরন বুঝে মেশিন লার্নিং প্রযুক্তির সাহায্যে রিয়েল টাইম ইউজকেস সাজেশন তৈরি করতেন। এই কাজের মধ্য দিয়েই আসিফুজ্জামান দ্রুত পরিচিতি পান মাইক্রোসফটের মধ্যে। বর্তমানে তিনি মাইক্রোসফট ৩৬৫-এ অপারেশনস লিড হিসেবে কাজ করছেন। যুক্তরাষ্ট্র থেকে শুরু করে বিশ্বব্যাপী কপাইলট চালু এবং সেটির গ্রাহক সেবা কার্যক্রম পরিচালনা করছেন তিনি। দায়িত্বের পরিধি বাড়লেও কখনো পিছপা হননি। বরং, তরুণদের প্রযুক্তিতে আগ্রহী করতে লিংকডইন ও অন্যান্য মাধ্যমে নিয়মিত ক্যারিয়ার পরামর্শ, প্রযুক্তি-সংক্রান্ত লেখা এবং অভিজ্ঞতা শেয়ার করছেন।
আসিফুজ্জামানের এই সাফল্য শুধু তার একার নয়, বরং বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের জন্য এক বড় অনুপ্রেরণা। তার এই গল্প শেখায়, সুযোগের জন্য বসে থাকলে চলবে না, চেষ্টা আর পরিশ্রমের মাধ্যমেই সুযোগ সৃষ্টি করতে হয়। অলিগলি থেকে শুরু করে বিশ্বখ্যাত প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব, যদি ইচ্ছা আর সাহস থাকে। বাংলাদেশের তরুণদের কাছে আসিফুজ্জামান আজ প্রমাণ করে দিয়েছেন, মেধা আর পরিশ্রম কখনো ব্যর্থ হয় না।