উত্তরায় বিমান দুর্ঘটনার রহস্যময় সতর্কবার্তার পেজ নিয়ে তোলপাড়, তদন্তে চাঞ্চল্যকর তথ্য
- আপডেট সময় মঙ্গলবার, ২২ জুলাই, ২০২৫
- ১০৭ বার দেখা হয়েছে
রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুলে বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ২০ জন। আহত হয়েছেন ১৭১ জনেরও বেশি মানুষ। এই হৃদয়বিদারক দুর্ঘটনার আগের দিন, একটি রহস্যময় ফেসবুক পেজ ‘অ্যানোনিমাস মেইন পেজ’ থেকে দেওয়া এক পোস্ট এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।
পোস্টটিতে বলা হয়েছিল, “একটি স্কুল ভবন ধসে পড়তে যাচ্ছে, বহু শিশু প্রাণ হারাবে। আমরা এক ভয়াবহ বিপর্যয় এগিয়ে আসতে দেখছি।” বলা হয়, ভবনের অবহেলাজনিত রক্ষণাবেক্ষণের অভাবই হবে বিপর্যয়ের মূল কারণ। অদ্ভুতভাবে, ঠিক পরদিনই ঘটে যায় উত্তরার বিমান দুর্ঘটনা। আর সঙ্গে সঙ্গেই সেই একই পেজ থেকে শেয়ার করা হয় দুর্ঘটনার ভিডিও। পোস্টে দাবি করা হয়, “আমরা সবসময় আগেই সতর্ক করি, কিন্তু কেউ গুরুত্ব দেয় না। এটি অত্যন্ত লজ্জার বিষয়।”
এমন এক রহস্যময় ‘ভবিষ্যদ্বাণীমূলক’ বার্তা এবং এর বাস্তব ঘটনার সঙ্গে মিল খুঁজে অনেকেই হতবাক। মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে পড়ে পেজটির বার্তা, ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। কেউ কেউ মনে করতে থাকেন, পেজটি কি কোনো অজানা উৎস থেকে আগাম বিপর্যয় আঁচ করতে পারে?
তবে ঘটনাটি যতই রহস্যময় মনে হোক, এটির পেছনে কার্যকারণ উদঘাটনে নেমেছেন বাংলাদেশের সাইবার নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা। প্রোবফ্লাই আইটি’র প্রতিষ্ঠাতা আব্দুল্লাহ আল ইমরান ও তার দল পেজটির পরিচালকদের সনাক্ত করেন। তদন্তে উঠে আসে, এটি মূলত যুক্তরাষ্ট্র ও নাইজেরিয়া থেকে পরিচালিত একটি দল, যারা অতীতে নানা ধরণের সন্দেহজনক কার্যক্রমে জড়িত ছিল। পেজটির উদ্দেশ্য ছিল মূলত আগাম বিপর্যয়ের ‘আভাস’ দিয়ে সাধারণ মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করা, আতঙ্ক ছড়িয়ে অনুসারী বাড়ানো।
আব্দুল্লাহ আল ইমরান জানান, তার টিম এই পেজটি পরিচালনাকারী চারজনকে শনাক্ত করেছে। এদের মধ্যে দুইজন নাইজেরিয়ান, একজন আমেরিকান, যারা অনলাইন জুয়া ও স্ক্যামিং চক্রের সঙ্গে জড়িত। দুর্ঘটনার আগের দিন তারা কেবল অনুমানের ভিত্তিতে ‘ভবন ধস’ সম্পর্কিত পোস্ট দেয়। আর পরদিন সত্যিকারের বিমান দুর্ঘটনার ঘটনা তাদের এই পোস্টকে ‘ভবিষ্যদ্বাণী’ হিসেবে দেখাতে সাহায্য করে। এই সুযোগেই তারা আরও কিছু বিভ্রান্তিকর বার্তা ছড়ায়।
এ বিষয়ে আরেক সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ আব্দুল্লাহ আল জাবির বলেন, এই ধরনের পেজ সাধারণত গুজব না ছড়িয়ে রহস্য আর ভয়কে পুঁজি করে। পেজের কথিত সতর্কতা বাস্তবের সঙ্গে মিলে গেলে সহজেই তারা মানুষের বিশ্বাস অর্জন করে। কিন্তু মূলত এসবই কৌশলী মিথ্যা প্রচার। তিনি সবাইকে এই ধরনের পেজ এড়িয়ে চলার এবং কোনো বার্তা যাচাই ছাড়া শেয়ার না করার আহ্বান জানান।
বর্তমানে দেশের প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছে, অল্প সময়ের মধ্যেই এই পেজের পুরো নিয়ন্ত্রণকারীদের তথ্য জনসম্মুখে প্রকাশ করা হবে। সাইবার বিশেষজ্ঞ স্রাবণ আহমেদও তার এক পোস্টে জানান, আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে পুরো চক্রের মুখোশ উন্মোচন করা হবে।
ঘটনাটি আবারও মনে করিয়ে দেয়—সোশ্যাল মিডিয়ার ‘রহস্যময় বার্তা’ যতই বাস্তব মনে হোক, তার পেছনের উদ্দেশ্যটি যাচাই না করে বিশ্বাস করা বিপজ্জনক। তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে সচেতনতা ও সতর্কতাই পারে এমন বিভ্রান্তি থেকে রক্ষা করতে।
