রবি ঠাকুরের অমর পঙক্তি, “ওমা ফাগুনে তোর আমের বনে ঘ্রাণে পাগল করে…।” আম বাগানে ভ্রমণ বিলাস করতে গেলেই মনে পড়ে কবিগুরুর এই চরণ। নীল আকাশের নীচে, বসন্তের আবাহনে প্রকৃতি যেন রঙের উৎসবে মেতে উঠেছে। ফাগুনের বাতাসে উষ্ণতার পরশ লেগে রয়েছে, আর শীতের জড়তা ঝেড়ে ফেলে নবজীবনে সেজেছে গাছপালা।
এমনই এক সময় কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলায় ধরা দিয়েছে এক মোহময় দৃশ্য—সবুজ পাতার আড়ালে উঁকি দিচ্ছে আমের মুকুল। মৃদু দোলা খাওয়া মুকুলের গন্ধে যেন মুগ্ধতার আবেশ ছড়িয়ে পড়েছে চারদিকে। এ গন্ধ মিশে আছে গ্রামের বাতাসে, সকাল-বিকেলের স্নিগ্ধতায়।
বাড়ির উঠোন হোক কিংবা আমের বাগান এর শ্যামল প্রান্তর, সর্বত্রই ছড়িয়ে পড়েছে আমের মুকুলের মাদকতা। শুধু সৌন্দর্য নয়, এটি এক সম্ভাবনার প্রতীকও বটে। অনেকে নিজেদের আঙিনায় লাগিয়েছেন আমগাছ, আবার কেউ বাণিজ্যিকভাবে গড়ে তুলেছেন আমের বাগান। অফিস প্রাঙ্গণ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কিংবা রাস্তার ধারে—যেখানেই চোখ যায়, সেখানে মুকুলের সোনালি ছোঁয়া।
প্রকৃতির আশীর্বাদে এবার আশানুরূপ আমের মুকুল দেখা যাচ্ছে আমগাছে। কৃষকের চোখে ফুটে উঠেছে স্বপ্ন, আশা জাগছে এক সমৃদ্ধ মৌসুমের। গাছের পরিচর্যায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন তারা—ওষুধ প্রয়োগ, যত্ন-আত্তির কোনো কমতি রাখছেন না, যাতে আমের ফলন হয় আশানুরূপ।
কৃষক আনোয়ার হোসেনের কণ্ঠে ঝরে পড়ে উচ্ছ্বাস, “এবারের বসন্ত যেন মুকুলের উৎসব নিয়ে এসেছে। বাগানজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে আমের মুকুল, আর তার সুবাসে মোহিত হচ্ছে সবাই।”
আরেক কৃষক আজিজার রহমান বললেন, “এ উপজেলায় এমন কোনো বাড়ি নেই, যেখানে আমগাছ নেই। প্রতিটি বাড়ির উঠোনে, আমের বাগান, রাস্তার ধারে—সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে মুকুলের মিষ্টি ঘ্রাণ। মনে হয় যেন প্রকৃতিই আমাদের আমন্ত্রণ জানাচ্ছে বসন্তের মহোৎসবে।”
ভূরুঙ্গামারী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল জব্বার জানালেন, “এ অঞ্চলের মাটি আমগাছের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী। এখানকার বেশ কয়েকজন কৃষক বাণিজ্যিকভাবে আম চাষ করছেন, এবং তাদের আমের বাগান-এ ব্যাপক মুকুল দেখা যাচ্ছে। কৃষকদের সহযোগিতার মাধ্যমে আমরা তাদের লাভবান করতে কাজ করছি।”
মুকুলের স্নিগ্ধ সুবাসের মাঝে বসন্তের প্রাণময়তা যেন আরও জাগ্রত হয়। প্রকৃতির এই অনন্য আয়োজনের সাক্ষী হয়ে ভূরুঙ্গামারীর প্রতিটি মানুষ স্বপ্ন দেখছে এক স্বর্ণালী ফলনের, যেখানে প্রতিটি মুকুল একদিন হয়ে উঠবে এক একটি রসালো আম।
আরো পড়ুনঃ
Leave a Reply