কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো অবশেষে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন। সোমবার রাজধানী অটোয়ায় এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ ঘোষণা দেন। দলীয় কোন্দল, অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ এবং কারো কারো মতে ভারতের সঙ্গে টানাপোড়েনের কারণে ক্রমবর্ধমান চাপের মুখে এ সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে তাঁকে। জাস্টিন ট্রুডো ২০১৫ সালে কানাডার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি কানাডার ২৩তম প্রধানমন্ত্রী এবং দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে তরুণ নেতাদের একজন। জাস্টিন ট্রুডো, তার পিতা পিয়েরে ট্রুডোর পদাঙ্ক অনুসরণ করে লিবারেল পার্টির নেতা হিসেবে বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। তাঁর নেতৃত্বে কানাডা বিশ্ব মঞ্চে পরিবেশ সুরক্ষা, মানবাধিকার এবং বহুজাতিকতার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে।
লিবারেল পার্টির ভেতরে দীর্ঘদিন ধরে জমে থাকা অসন্তোষ সম্প্রতি উথলে উঠেছে। ২০ জনেরও বেশি সংসদ সদস্য ট্রুডোর পদত্যাগের জন্য একটি পিটিশনে স্বাক্ষর করেছেন। কয়েক মাস আগে ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড নীতিগত মতভেদ দেখিয়ে পদত্যাগ করেন। তাঁর এ পদক্ষেপ দলের ভেতরে আরও অস্থিরতা সৃষ্টি করে।
সম্প্রতি টরন্টো ও মন্ট্রিয়লে দুটি উপনির্বাচনে লিবারেল পার্টির পরাজয় দলীয় নেতৃত্বে পরিবর্তনের দাবি আরও জোরালো করে তোলে। পার্টির নতুন নেতা নির্বাচনের জন্য সংসদ অধিবেশন মার্চ পর্যন্ত স্থগিত রাখা হয়েছে।
ট্রুডোর শাসনামলে বাড়ি ভাড়া ও খাদ্যদ্রব্যের দাম বাড়তে থাকায় সাধারণ মানুষের অসন্তোষ বেড়েছে। কনজারভেটিভ পার্টি এ পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে তাঁর কার্বন ট্যাক্স ও অর্থনৈতিক নীতির কঠোর সমালোচনা করছে। জিনিসপত্রের দাম বাড়ায় সাধারণ মানুষ ট্রুডোর ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে পড়েন। যদিও ভোক্তার স্বার্থ ও ব্যবসাকে টিকিয়ে রাখতে দেশটি বিপুল খরচ করে থাকে। তা সত্ত্বেও জিনিসপত্রের দাম নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। ডোর জনপ্রিয়তা কমার অন্যতম আরেকটি বড় কারণ ত্রুটিপূর্ণ অভিবাসন নীতি। তাঁর আমলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে লাখ লাখ মানুষ কানাডায় এসেছেন; যা দেশটির আবাসনে বিরাট প্রভাব ফেলেছে। চাহিদার তুলনায় আবাসনের সংখ্যা কম হওয়ায় বাড়ি ভাড়া বেড়েছে কয়েক গুণ। সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে, লিবারেল পার্টি বিরোধীদের চেয়ে ২৬ শতাংশ পিছিয়ে রয়েছে।
এনডিটিভি দাবি করেছে, ভারতের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার ফলে ট্রুডোর এমন পরিস্থিতি হয়েছে। তাদের মতে, ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে ট্রুডো ভারতের বিরুদ্ধে কানাডায় খালিস্তানি নেতা হরদীপ সিং নিজ্জরের হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ আনেন। ভারত এ অভিযোগ অস্বীকার করে এবং পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে কানাডার ছয় কূটনীতিককে বহিষ্কার করে। ট্রুডোর ভারতবিরোধী বক্তব্য অনেকের কাছে রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে দেখা দিয়েছে, যা দেশের অভ্যন্তরীণ সংকট থেকে দৃষ্টি সরানোর চেষ্টা বলে সমালোচিত হয়েছে।
বাংলাদেশ ও কানাডা প্রসঙ্গ
ট্রুডোর শাসনামলে বাংলাদেশ ও কানাডার মধ্যে সম্পর্ক আরও মজবুত হয়েছে, ভবিষ্যতে নতুন নেতৃত্বের অধীনে এই সম্পর্ক নতুন আঙ্গিকে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পাবে। কানাডার নতুন নেতৃত্ব বাংলাদেশের সঙ্গে বিদ্যমান বাণিজ্যিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও জোরদার করবে বলে আশা করা যায়।
পিতা পিয়েরে ট্রুডোর সাথে ১৯৮৩ সালে বাংলাদেশে আসেন জাস্টিন ট্রুেডো
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য নীতি নিয়ে বিরোধ, কোভিড-পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার এবং অভিবাসন ইস্যুতে ট্রুডোর অবস্থান তাঁকে সমালোচনার মুখে ফেলে। অভ্যন্তরীণ সংকট ও নেতৃত্বের প্রতি আস্থাহীনতা মিলিয়ে তাঁর অবস্থান দুর্বল হয়ে পড়ে।
ট্রুডো নতুন নেতা নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী পদে দায়িত্ব পালন করবেন। তবে বিরোধীদলগুলো নতুন নির্বাচনের জন্য চাপ দিচ্ছে। সম্ভাব্য লিবারেল নেতা হিসেবে মেলানি জোলি, ডমিনিক লে ব্ল্যাঙ্ক, ও মার্ক কার্নির নাম আলোচনায় রয়েছে। নির্বাচনের আগেই নতুন নেতৃত্ব না পেলে লিবারেল পার্টি আরও বিপদের মুখে পড়তে পারে।
ট্রুডোর পদত্যাগ কানাডার রাজনীতিতে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে। দীর্ঘ এক দশকের শাসনের পর তাঁর প্রস্থান উদারপন্থী নেতৃত্বের ভবিষ্যৎ প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে।
Leave a Reply